May 19, 2022, 9:50 pm
স্টাফ রিপোর্টার ঃ মুনাফায় বড় ধরনের উত্থান-পতনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সিলেট বিভাগের ১২টি চা-বাগান নিয়ে কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম চললেও মুনাফায় থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ন্যাশনাল টি কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে সর্বশেষ দুই হিসাব বছরে টানা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিক পর্যন্ত কিছুটা মুনাফায় থাকলেও কোম্পানির সম্পদের তুলনায় খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। বিশেষ নিরীক্ষার জন্য গত ২৪ মার্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে এসইসি। বিপুল পরিমাণের সম্পদ থাকার পরও নামমাত্র মুনাফায় থাকা ন্যাশনাল টি কোম্পানির ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের এসইসির চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষা করতে হবে নিরীক্ষককে। ২০২০-২১ হিসাব বছরে ন্যাশনাল টি কোম্পানি তার অধীনস্ত ১২টি চা-বাগান থেকে ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার কেজি চা উৎপাদন করে। তবে ওই সময়ে চায়ের মূল্য বেশি পেলেও শ্রমমজুরি, বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের ব্যয় বাড়ায় বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ফলে লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি। ওই বছরে কোম্পানিটি প্রতি কেজি চা বিক্রি করে ১৭৯ টাকায়, যেখনে প্রতি কেজি চায়ের উৎপাদন ব্যয় হয় ২১৫ টাকারও বেশি। আগের হিসাব বছরেও একই কারণে লোকসানে ছিল কোম্পানিটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতের রাষ্ট্রয়াত্ব কোম্পানি ন্যাশনাল টি কোম্পানির বিগত দশ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিশেষ নিরিক্ষক হিসেবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরই ধরাবাহিকতায় কোম্পানিটির ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূল্য তালিকা চেয়ে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ১১টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর বিধি ১৪, উপ-বিধি (৩) এবং (৪) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ক্ষমতা বলে জনস্বার্থে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে চায় কমিশন। ফলে এই বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগ্রহপত্রসহ মূল্য তালিকা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- ন্যাশনাল টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত ব্যালেন্স শিট এবং আর্থিক বিবৃতির সম্পদ, দায় (ব্যালেন্স শিট দায়বদ্ধতা সহ), ইক্যুইটি এবং উপার্জনের সঠিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুযায়ী যথাযথভাবে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে কি-না তা দেখতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক প্রাসঙ্গিক সমর্থনসহ বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) নির্ধারণের সম্ভাব্য উপায?গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে। কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক ২০১৬ সালের ৩০ জুন হওয়া হিসাব বছর পর্যন্ত এবং পরবর্তী হিসাব বছরের তুলনামূলক আর্থিক কর্মক্ষমতা নির্ণয় করতে হবে। কোম্পানিটির প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্ট্যাটুটরি অডিটর এবং কমপ্লায়ন্স অডিটরের ভূমিকা পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেস নিরীক্ষক কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদের মূল্য নির্ধারণের জন্য কোম্পানির নীতি পরীক্ষা করবে এবং সম্পদের সম্ভাব্য অবচয় ও তার স্থায়ীত্বকাল পর্যালোচনা করবে। নিরীক্ষক কোম্পানির ব্যবহারিক ক্ষমতা এবং গত কয়েক বছরের জন্য অপারেটিং নগদ প্রবাহের প্রবণতা পর্যালোচনা করবে। বৃক্ষরোপণসহ সকল সম্পদের তথ্য সঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়েছে কি-না তা যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ব্যাংক ঋণের তথ্য তদন্ত করবে। এছাড়া চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শ্রমিকদের প্রদান করা অর্থসহ সামগ্রিক বেতন ব্যবস্থার সঙ্গে কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণতা রয়েছে কি-না তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক কাঁচামাল সংগ্রহ, বিক্রয় পণ্যের মূল্য এবং আমদানির সংগ্রহ করে তদন্ত করবে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের নথির প্রমাণ সনাক্ত করবে। বিশেষ নিরীক্ষক কোম্পানির পূর্বের লভ্যাংশ ঘোষণার প্রবণতা এবং কোম্পানির নীতির সঙ্গে ব্যাংক ঋণের বাইরে লভ্যাংশ ঘোষণার প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করবে। নিরীক্ষিক কোম্পানির সামগ্রিক পরিচালনায় পরিচালনা পর্ষদ, অডিট কমিটি, মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রধানসহ শীর্ষ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা যাচাই করবেন। সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম পেলে তা প্রমাণসহ জমা দিতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক সহায়ক নথিসহ রাজস্ব স্বীকৃতি এবং পরিমাপের মানদণ্ড যাচাই করবে। বিশেষ নিরীক্ষক জৈবিক সম্পদ, ভবন ও অন্যান্য নির্মাণ এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধান কবে। নিরীক্ষিক কোম্পানিটির ইনভেন্টরি মূল্যায়ন, হিসাব গ্রহণযোগ্য, অগ্রিম, আমানত ও প্রিপেমেন্ট এবং অন্যান্য বর্তমান সম্পদের সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করবে। আর বিশেষ নিরীক্ষক অপারেটিং খরচ (বিশেষ করে বেতন ও মজুরি, পারিশ্রমিক), কর্মচারি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী এবং বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের দেওয়া সুবিধাগুলি তদন্ত করে দেখবে?
Leave a Reply